হৃদয় খানঃ পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ। পুলিশ জনগণের বন্ধু, এই কথাটির বাস্তবতায় প্রমাণ করলেন বানিয়াচংয়ের কৃতি সন্তান সাহসী পুলিশ কনস্টেবল রেজাউল আলম নাসিম। গত ২৭ জুন বুধবার সন্ধ্যায় তিনি সহকর্মী কনস্টেবল হামিদ’র অসুস্থতার খবর পেয়ে তাঁকে দেখার জন্য ফল কিনতে বাজারে যান। ফেরার পথে দেখতে পান, সিলেট উপশহরের জে ব্লক এলাকায় দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দুইদল লোকের মারমুখী অবস্থানে আছে, দুই পাশের যানবাহন চলাচল বন্ধ এবং লোকজন আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ করছে। তিনি ট্রাফিক জ্যামের মধ্যেও মোটর সাইকেল নিয়ে সংঘর্ষস্থলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন দেখে লোকজন তাকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সামনে অগ্রসর হতে নিষেধ করেন। কিন্তু তিনি তাতে কর্ণপাত না করে একাই পুলিশের পোশাক পরিহিত অবস্থায় মোটর সাইকেলের সাইরেন বাজিয়ে মারমুখী দাঙ্গাবাজদের মধ্যস্থলে ঢুকে পড়েন। সাহসী রেজাউল হাতে একদম সময় নেই, সাথে নেই কোন অস্ত্র। কিভাবে এই দাঙ্গা কে থামাবেন তিনি। হঠাৎ মাথায় বুদ্ধি এল তার, পকেটে থাকা বাঁশি নিয়েই এবং এক দাঙ্গাবাজের হাত থেকে একটি দেশীয় অস্ত্র কেড়ে নিয়ে পুলিশের বাঁশি বাজাতে বাজাতে দুইদল দাঙ্গাবাজদের দুই দিকে ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেন। পরে পুলিশের একটি টহল টিম এসে তার সাথে যোগ দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তার এই সাহসিকতার জন্য ভয়াবহ সংঘর্ষের হাত থেকে রক্ষা পায় সিলেট উপশহরের জে ব্লক এলাকাবাসী। এমন সাহসী ও মহৎ কাজের জন্য সিলেটজুড়ে এবং পুলিশের ডিপার্টমেন্টে তার প্রশংসা শুরু হয়। গত বৃহস্পতিবার জে ব্লকের বাজার ব্যবসায়ীরা রেজাউলের এমন সাহসীকতার জন্য অফিসে গিয়ে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। ২২ নং উপশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার এডভোকেট সালেহ আহমদ সেলিম পুলিশ সদস্য সাহসী রেজাউল আলম নাসিম কে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান এবং তার সাহসী ভূমিকা ভূয়সী প্রশংসা করেন।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার ফয়সল মাহমুদ পিপিএম-সেবা তার সাহসিকতার জন্য অফিসিয়ালভাবে তাকে পুরস্কৃত করেন এবং রিওয়ার্ড ডাবল জিএস প্রদানের ঘোষণা দেন। এসম আরো উপস্থিত ছিলেন সিলেট সহকারী উপ-পুলিশ কমিশনার জনাব নায়হানুল বারি, সার্জেন্ট আবুবকর শাওন, সার্জেন্ট পাংকু তালুকদার, সার্জেন্ট নাজমুল আলম সহ অফিসের অন্যান্য পুলিশ সদস্য গন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বানিয়াচংয়ের মানুষ এলাকার সন্তানের এমন বীরত্বপূর্ণ সাহসিকতায় প্রশংসিত হতে দেখেও গর্ববোধ করছেন। পুলিশ সদস্য রেজাউল আলম নাসিম হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলা সদরের ৪নং বানিয়াচং দক্ষিণ-পশ্চিম ইউনিয়নের বাসিয়াপাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সুনামধন্য দলিল লেখক মরহুম আব্দুল আলীর পুত্র। নাসিম সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে কনস্টেবল পদে চাকুরীরত আছেন।
পুলিশ কনস্টেবল রেজাউল জানান, তার ১১ বছরের কর্মজীবনে বিগত বছর গুলোতে ট্রাফিক কল্যান সভায় আমাকে সততা ও কর্মদক্ষার জন্য আরও ৩ বার নগদ পুরষ্কার দেওয়া হয়। তার ১১ বছর চাকরি জীবনে ৭৯ টি পুরষ্কার চাকুরির খতিয়ান বহিতে লিপিবদ্ধ আছে,এখন পর্যন্ত কোন তিরস্কার নেই।